প্রণব - ওম, ওং,ওঁ, ওঁং এর অর্থ কী ? PRONAB-THE TRUE MEANING-SSPF
HTML-код
- Опубликовано: 19 янв 2025
- প্রণব কথাটার অর্থ ঈশ্বরের জপ্ । প্রণব কথাটার আর একটা মানে প্রতিনিয়ত নতুন। এই প্রণব থেকেই সমস্ত সৃষ্টি। ।এই প্রণবের গর্ভেই আমাদের সবার জন্ম। আবার প্রণব কথাটার আর একটা মানে হচ্ছে যা উচ্চারণ করে স্তব করা হয় তাকেই বলে প্রণব। বেদের মূল এই প্রণব।
এইখানে একটা কথা আমি বলি। প্রণব অর্থাৎ ওম, বা ওং বা ওঁ বা ওঁং। একটা জিনিষ খেয়াল করুন, ও এর সঙ্গে ম বা ং বা ঁ যোগ করা আছে -। "ম" অর্থাৎ মহেশ্বর বা কারুর কারুর, কথায় পরব্রহ্ম বা গুনাতীত ব্রহ্ম . কিন্তু,এই অনুস্বার বা চন্দ্রবিন্দু এর অর্থ কি ? বীজ মন্ত্রের অর্থ খুঁজতে গিয়ে দেখেছি ঁ (চন্দ্রবিন্দু ) হচ্ছে দুঃখ হরাত্মক বাচক। আর ং ( অনুস্বর ) হচ্ছে সুখপ্রদ ও দুঃখনাশন।
যাই হোক, ওম , ওঁ, ওং, ওঁং - এই চারটিই প্রণব বাচক।
প্রথম "ওম" প্রনবটি তমোগুণের প্রতিপাদক, তাই জ্ঞানীরা ব্যবহার করেন না।
দ্বিতীয় প্রণব অর্থাৎ ওঁ নৈসর্গিক ঘটনায় শোনা যায়। বহু শাস্ত্রে, এই প্রণবের ব্যবহার পাওয়া যায়।
তৃতীয় প্রণব অর্থাৎ ওং কার ত্রিদেবাত্মক অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের প্রতীক। অনেকেই এটির ব্যবহার করেছেন।
চতুর্থ প্রণব অর্থাৎ ওঁং এর কথা প্রায় শোনা যায় না। তার কারন হচ্ছে - যাদের সগুন সাধনা সমাপ্ত না হয়েছে, তাদের পক্ষে এর ব্যবহার শক্তির অধিক কাজ বলে নির্দিষ্ট হয়। যাদের ভিতর থেকে জাতিভেদ জ্ঞান দূর হয় নাই, নির্গুণ সাধনার যোগ্য হন নাই, তাদের পক্ষে এই চতুর্থ প্রণব ব্যবহার করা উচিত নয়।
"ওঁং" বানানের প্রতিধ্বনি পাই শিব পূরণে। সেখানে ভগবান শিব, ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে বলছেন : আমার পাঁচটা মুখ। আর তা হচ্ছে সৃষ্টি, পালন, সংহার, তিরোভাব এবং অনুগ্রহ। সৃষ্টি ভূমিতে, স্থিতি জলে,সংহার অগ্নিতে, তিরোভাব বায়ুতে,অনুগ্রহ আকাশে স্থিত। পৃথিবী থেকে সৃষ্টি, জল থেকে বৃদ্ধি, অগ্নিতে সংহার, বায়ুতে স্থানান্তর আর আকাশ সকলকে অনুগ্রহিত করে। সর্বপ্রথম আমার মুখ থেকে ওঁংকার উদ্গারিত হয়। উত্তরদিকের মুখ থেকে অকার, পশ্চিম মুখ থেকে উকার, দক্ষিণ মুখ থেকে মকার, পূর্ব মুখ থেকে বিন্দু (ঁ) মধ্যের মুখ থেকে নাদ (ং) উচ্চারিত হয়েছে। এইভাবে পাঁচ অবয়ব দ্বারা "ওঁং"কার বিস্তারিত হয়েছে।
বেশিরভাগ পন্ডিতদের মতে, প্রণব আসলে ত্রিবর্ণাত্মক। আ বর্ণটি প্রথমটির অর্থাৎ অ এর উচ্চারণ ভেদ মাত্র।
প্রণবকে ত্রিবর্ণাত্মক, অর্থাৎ সত্ত্ব, রজ, তম গুনের প্রতীক বলা যেতে পারে। আবার পঞ্চবর্নাত্বক অর্থাৎ অ-আ-উ-ঊ-ম অর্থাৎ পঞ্চভূতের (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম )-এর প্রতীক বলা যেতে পারে।
আবার একাক্ষর বলা যেতে পারে। অর্থাৎ অনুস্বার, চন্দ্রবিন্দু এগুলোকে বর্ণ থেকে বাদ দিয়ে এক অক্ষর বলা যেতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি স্বরই পূর্ণ বর্ণ। কেবল স্বরেই পূর্ণমাত্রা আছে। ব্যঞ্জন পূর্ণ বর্ণ নহে। স্বর, স্বয়ং উচ্চারিত হতে পারে। কিন্তু ব্যঞ্জন, অন্যকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়। সুতরং ও এবং ম্ এই দুটিতে মিলিত হয়ে যে ওম বা ওং হয়েছে, এঁকে এক বর্ণ বা এক অক্ষর বলা যেতে পারে। অতএব ব্যঞ্জন ও একটি স্বর একত্র থাকলে, এই দুটিকে একটি বর্ণ বলা হয়।
প্রণব অসীম শক্তির আধার। এই শক্তি অজ্ঞানীর কাছে সুপ্ত। জ্ঞানীর কাছে উদ্ভাসিত।
এইবার প্রণব সম্পর্কে সুপ্ত সত্য কথা বলবো, প্রণব আসলে একটা ধ্বনি।জীবনরূপ অগ্নি ও প্রাণরূপ বায়ুর মিথুনে বা সংঘর্ষে এই ব্রহ্ম-শব্দ উৎপত্তি হয়েছে। এটি অর্থবহ শব্দ নয়। এই ধ্বনির কোনো অর্থ হয় না। পন্ডিতরা যে যার মতো করে অর্থ বের করেছেন।এই ধ্বনি প্রতিনিয়ত উদ্গীথ হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সর্বত্র, ও সর্বদা। ধ্যানস্থ হয়ে কান পাতলে এই শব্দ শোনা যায়। এবার, ধ্বনি বা শব্দ সৃষ্টির রহস্যঃ একটু দেখে নেই।
আমরা জানি, ধ্বনি চার প্রকার, পরা, পশ্যন্তী, মধ্যমা ও বৈখরী।
শব্দের বা স্বরের উৎপত্তি হচ্ছে পরা - আমাদের শরীরের ক্ষেত্রে এটি মূলাধার। এই মূলাধারে আছে বায়ুশক্তি বা উর্জা শক্তি।সৃষ্টিতত্ত্বের এখানেই অবস্থান। এইখানেই ধ্বনির উৎপত্তি। পরা কথাটার অর্থ হচ্ছে উচ্চ। অর্থাৎ ধ্বনির সর্বোচ্চ পর্যায়, যা আমাদের গোচরীভূত নয়।
এর পরে আছে পশ্যন্তি : এটি আমাদের নাভিমূল। যার জন্য কেউ কেউ বলে থাকেন, প্রণব নাভি থেকে উৎপন্ন শব্দ।আমাদের নাভিচক্রের বায়ু থেকে আসে। শোনা যায় যোগীরা এই ধ্বনি শুনতে পান। একে বলে নাদব্রহ্ম।
ধ্বনি এর পরে, নাভি থেকে চলে আসে হৃদয়ে। এখানকার অবস্থানে ধ্বনিকে বলা হয়, মধ্যমা। হৃদয়ের বায়ুচক্রে যখন ধ্বনি অবস্থান করে, তখন তাকে বলে মধ্যমা। এটিও সূক্ষ্ম। তাই হৃদয়ের ডাক সবাই শুনতে পায় না।
এরপরে, কন্ঠে - যেখান থেকে ধ্বনির উৎপত্তি বলে সাধারণের ধারণা। আসলে এই পর্যায়ে এসে ধ্বনি শব্দে পরিণত হয়ে যায়। এই ধ্বনি বা শব্দ আমরা শুনতে পাই। একে বলে বৈখরী।
এবার বিশ্বব্রহ্মান্ডকে যদি আমরা বিরাট পুরুষের দেহ বলে কল্পনা করি, তবে দেখতে পাবো, সেই বিরাট পুরুষের মূল ঊর্যাশক্তি থেকে এই ধ্বনির উৎপত্তি। এটি সৃষ্টির সূচক মাত্র। এর কোনো অর্থ হয় না। কেবল গুন্ বর্তমান।
শব্দ দুই রকম : ধ্বনি ও বর্ণ। ধ্বনি অর্থবহ নয়। যেমন বিভিন্ন বাদ্যের বাজনা।কাঁসর ঘন্টা,বাঁশির সুর, বজ্রের ধ্বনি। মেঘের ডাক। ইত্যাদি। তেমনি প্রণব অর্থবহ নয়। প্রণব ধ্বনি, তাই অর্থবহ নয়।
বর্ণ কিন্তু অর্থবহ। মানুষ এই বর্ণের সাহায্যেই কথা বলে। তাই অর্থবহ। বর্ণ আবার দুই প্রকার ব্যঞ্জন বর্ণ ও স্বরবর্ণ। স্বরবর্ণ নিজে থেকে উচ্চারিত হতে পারে। কিন্তু ব্যঞ্জন বর্ণ স্বরবর্ণের সাহায্যে উচ্চারিত হয়।
অগ্নি ও বায়ুর মিশ্রনে বর্ণের সৃষ্টি। বর্ন আর কিছুই নয় আলোর বিন্দুর সমষ্টি। পরাবিদ্যাবিদ-গন বলছেন, দেবতারা যখন কথা বলেন, তখন এক আলোর আভা দেখতে পাওয়া যায়। তাই ওম হচ্ছে আদি ধ্বনি, এটি অর্থবহ নয়।অগ্নিতত্ত্ব ও বায়ুতত্ত্বের মিশ্রনে এই প্রণবের উৎপত্তি। যে যার মতো করে আমরা অর্থ দিয়েছি মাত্র।