খেচরী মুদ্রা - KHECHARI MUDRA - HATHAYOG - SASANKA SEKHAR PEACE FOUNDATION

Поделиться
HTML-код
  • Опубликовано: 14 июл 2020
  • :
    আজ আমরা শুনবো, খেচরীমুদ্রা সম্পর্কে। আসলে আধ্যাত্মিক জগৎটাই খেচরী বিদ্যা। এবং খেচরী মুদ্রা তার একটা অঙ্গমাত্র।
    ঈশ্বরের দেওয়া এই শরীরকে ছেদন করে, রসের স্বাদ নিতে হবে, এতে আমি বিশ্বাসী নোই। কিন্তু এই বিদ্যা সম্পর্কে জানতে আমার আগ্রহ আছে। তো এ সম্পর্কে হঠযোগ প্রদীপিকা যা বলছে, আমরা আজ সেই কথাই শুনবো।
    "খ" কথাটির অর্থ আকাশ, খে অর্থাৎ আকাশে, চর অর্থাৎ যে গমন করে তাকে বলা হয় খেচর। তা সে পাখী হতে পারে, বা চাঁদ-সূর্য-নক্ষত্র হতে পারে। খেচরী মুদ্রা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া যার সাহায্যে আমরা আমাদের চিত্তাকাশে বা মন-আকাশে, চিদাকাশে ইচ্ছেমত বিচরণ করতে পারি। অনেকের ধারণা খেচরী মুদ্রা অভ্যাস করলে, আকাশে যত্র তত্র বিচরণ করা যায়, ব্যাপারটা আদৌ তা নয়।
    হঠযোগীগণ বলে থাকেন, সাধক জিহ্বাকে বিপরীতমুখী করে, কপালরন্ধ্রে প্রবেশ করিয়ে স্থির দৃষ্টিতে ভ্রূযুগলের মধ্যে দেখতে থাকবে। একেই খেচরী মুদ্রা বলে।
    খেচরী মুদ্রা সাধন করতে গেলে, জিহ্বাকে লম্বা করতে হবে। আর এই জিহ্ববাকে লম্বা করবার জন্য জিহবার নিচের দিকে যে চামড়া আছে তাকে তীক্ষ্ণ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটতে হবে। ধীরে ধীরে কাটতে হবে। জিহবার মূল যে শিরা তাকে প্রথম দিন চুল পরিমান কাটতে হবে। আর সাতদিন যাবৎ প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় সৈন্ধব চূর্ন ও হরিতকি দ্বারা ওই ছিন্ন স্থানে ঘর্ষন করতে হবে। কেউ কেউ বলে থাকেন, সৈন্ধক না লাগিয়ে, খয়ের ও হরিতকি চূর্ন দিয়ে ঘর্ষণ করতে হবে। প্রতি ৭ দিন অন্তর এই ভাবে ছেদন করতে হবে আর খয়ের ও হরিতকি চূর্ন দিয়ে ঘর্ষণ করতে হবে। এই ভাবে ছয় মাস যাবৎ প্রতি সাত দিনে একবার করে লোম পরিমান জিহ্বার মূলগতা নাড়ী ছেদন করতে হবে। এভাবে ছেদন করতে করতে একসময় আমাদের জিহ্বার মুলে যে কপালকুহরে রসনা সংযোগের প্রতি বন্ধকীভূত শিরা আছে, সেই নাড়ীর বন্ধন কেটে যাবে।
    এই খেচরী মুদ্রার অভ্যাস করতে গেলে, আমাদের আগে সিদ্ধাসন, পদ্মাসন বা বজ্রাসনে বসবার অভ্যাস করতে হবে। যে কোনো একটি আসনে বসে প্রথমে মহামুদ্রা, মহাবন্ধ , ও মহাবেধ মুদ্রার অভ্যাস করতে হবে। এই যোগ তিনটি আমাদের প্রতিদিন, প্রতি প্রহরে একবার করে আট প্রহরে আটবার অভ্যাস করতে হবে।
    খেচরী মুদ্রার সাধক এই ছেদন কার্য্য করতে করতে জিহবা বর্দ্ধিত হলে, সেই জিহ্বাকে বিপরীত অভিমুখী করে অর্থাৎ জিভ উল্টে দিয়ে নাড়ীত্রয়ের সঙ্গমস্থলে অর্থাৎ ইড়া -পিঙ্গলা ও সুষুম্না নাড়ীর সঙ্গমস্থলে স্পর্শ করতে হবে। এই যে তিন নাড়ীর সঙ্গমস্থল একে বলে ব্যোমচক্র । হঠযোগীগণ বলে থাকেন, মাত্র একঘন্টা এই অবস্থায় থাকতে পারলে, জরা ব্যাধি মৃত্যুকে জয় করতে পারে। এমনকি তাকে যদি বিষধর সাপে কামড়ায় , তথাপি তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এতে করে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা এমনকি মূর্ছা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে । খেচরী মুদ্রার সাধককে কর্ম্মফল দ্বারা বাঁধা যায় না। অর্থাৎ সাধক কালের উর্দ্ধে উঠতে পারেন । এই মুদ্রা সাধনকালে সাধককে ভ্রূযুগলের মধ্যে মনকে আবদ্ধ রাখতে হয়, ফলতঃ তিনি সব সময় চিদাকাশে বিচরণ করে থাকেন । এমনকি এই অবস্থায় সাধকের রেতঃপাত হতে পারে না। অর্থাৎ স্বাভাবিক ভাবেই সে ব্রহ্মচারী হয়ে যায়। এই সময় চন্দ্রামৃত অর্থাৎ তালুস্থিত ছিদ্র দ্বারা গলিত সুধা পান করতে থাকেন । হঠযোগীগণ বলে থাকেন, যোগস্থ সাধক ১৫ দিনের মধ্যেই মৃত্যুকে জয় করতে পারেন। যোগীগণ বলছেন, দীপশিখা যেমন তৈলপূর্ন বর্তিকা ত্যাগ করে না, অগ্নি কখনো কাঠকে ত্যাগ করে না, তেমনি জীবাত্মা চন্দ্রামৃত পুর্ন শরীর ত্যাগ করে না।হঠযোগীগণ বলে থাকেন, নিত্য গোমাংস ভক্ষণ করবে, এবং অমর বারুনী পান করবে। এখানে গো শব্দের দ্বারা জিহ্বাকে বোঝায়। সেই জিহ্ববা তালুতে প্রবেশ করলে, গোমাংস ভক্ষণ হয়। জিহ্ববা তালুতে প্রবেশ করলে, দেহে তাপ উৎপাদন হয়, এবং তার ফলে চন্দ্র হতে অর্থাৎ ভ্রূমধ্য থেকে যে সুধা বা রসামৃত ক্ষরিত হয়, তাকে অমরবারুনী বলে।
    খেচরী মুদ্রাকারীর জিহ্বা লম্বা হয়ে থাকে। আর সেই লম্বা জিহ্বার অগ্রভাগ নিরন্তর ক্ষার-কটু-অম্ল-মধু-ঘৃত ও দুধের ন্যায় স্বাদ-বিশিষ্ট লালা ক্ষরণকারিনী হয়ে চুম্বনকারিনী অর্থাৎ স্পর্শ করে তার স্বাদ গ্রহণ করে থাকেন । যোগী উর্দ্ধমুখ হয়ে জিহ্বাকে কপাল কুহরে সংযত করে পরাশক্তিকে চিন্তা বা ধ্যান করতে করতে করতে প্রাণ বায়ুর দ্বারা মূর্দ্ধা থেকে গলিত রস আমাদের কন্ঠকে পূরণ করতে পারেন। এই কণ্ঠদেশকে হঠযোগীগণ বলে থাকেন, বিশুদ্ধ চক্র যা ষোলোটি পাপড়ি বিশিষ্ট পদ্ম। এই রস যিনি পান করেন, তিনি সারাজীবন ব্যাধীশূন্য হয়ে কোমল পদ্মের ন্যায় দেহের অধিকারী হয়ে থাকেন।
    মেরু ও মুর্দ্ধা উভয়ের মধ্যে যে ছিদ্র বা আকাশ আছে, সেই আকাশে শীতল রস আছে। সেখানে যে তত্ত্ব আছে অর্থাৎ ব্রহ্মতত্ত্ব আছে, তাকে ব্রহ্মের মুখ বা প্রধান স্থান বলা হয়ে থাকে। আমাদের দেহের বাম দিকে অবস্থিত প্রশস্ত ইড়া নাড়ী থেকে সেই রস ক্ষরিত হয়। আর এই রসের দ্বারাই রোগ উৎপন্ন হয়ে অধোগামী মানুষের মৃত্যু হয়। অতএব হঠযোগীগণ এই খেচরী মুদ্রা দ্বারা শরীরে রোগের প্রবেশদ্বারকে বন্ধ করে থাকেন । সুস্বাস্থের জন্য এ একটি উত্তম উপায়।
    যাইহোক, খেচরী মুদ্রা আসলে আমাদের অন্তর্জগতে নির্বিবাদে ভ্রমনের একটা যান। হঠযোগীগণ এমনি অনেক উপায় বা মুদ্রার কথা বলেছেন, যা আমাদের ভারতীয় আধ্যাত্মিক যোগবিদ্যার একটা অমূল্য সম্পদ। কিন্তু কথা হচ্ছে, এগুলো সবই গুরুবিদ্যা। গুরুর সান্নিধ্যে থেকেই এর চর্চা করতে হয়। আর এই গুরুদেবদের সন্ধান পাওয়া দুর্লভ। তবে নিজের শরীর বুঝে একটু আধটু যোগক্রিয়ার অভ্যাস করলে, আমারা এর সুফল অবশ্যই অনুধাবন করতে পারবো। এবং আমাদের মধ্যে এই বিদ্যাকে আয়ত্ত্ব করবার একটা আগ্রহ জাগ্রত হতে পারে। তখন আমরা উপায়ও নিশ্চই খুঁজে পাবো।
    ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। হরি ওম।
    SASANKA SEKHAR PEACE FOUNDATION - ETERNAL PEACE SEEKER

Комментарии •