তিনি চা বিক্রেতা কিন্তু পরিচয় জানলে আকাশ থেকে পড়বেন।

Поделиться
HTML-код
  • Опубликовано: 1 фев 2025
  • তিনি পৌরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলর। জনপ্রতিনিধি, কিন্তু চালাচ্ছেন চা-দোকান। নিজেই চা বানিয়ে বিক্রি করছেন।দিনভর চায়ের দোকানেই থাকেন। এখানে সাধারণ মানুষ আসেন নানা সমস্যা নিয়ে।
    চায়ের দোকানে বসেই সেগুলো সেরে দেন। নিজের সিল-প্যাড রাখা থাকে দোকানে। অফিসিয়াল কাজকর্মও সেখানেই সারেন।
    তিনি মির্জাপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক।
    ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি।
    এলাকায় সৎ হিসেবে পরিচিত এই কাউন্সিলরের প্রশংসা সবার মুখে মুখে।
    আব্দুর রাজ্জাকের বাবার নাম নাজিম উদ্দিন মিয়া। তাঁরা পাঁচ ভাইবোন। ভাইদের মধ্যে কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক বড়।
    ১৯৯৬ সালে এসএসসি পাস করে মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি হলেও সাংসারিক কারণে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি।
    আব্দুর রাজ্জাক ২০০৩ সালে সংসার জীবন শুরু করেন। তাঁর এক মেয়ে দৃষ্টিমণি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছেলে আব্দুর রহমান সানির বয়স সাড়ে চার বছর।
    আব্দুর রাজ্জাকের বড় দুই বোনের অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। মেজভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার করেছেন।
    ছোট ভাই মা-বাবা ও স্ত্রী কন্যা নিয়ে তাদের সংসার। জমি-জমা তেমন না থাকলেও আবাদ করলে সারা বছরের সংসারের খাবারের সংস্থান হয়।
    তার পিতা নাজিম উদ্দিন এক সময় ইটভাটার শ্রমিক সরবরাহের কাজ করতেন।
    কিন্ত বয়সের কারণে ওই কাজ ছেড়ে দিয়ে বাড়ির পাশে উপজেলা প্রশাসনের মসজিদের পাশে একটি চায়ের গুনটি দোকান দেন কয়েক বছর আগে।
    ছোট ভাইয়ের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের দোকান আছে। অর্থবিত্ত না থাকলেও অভাব নেই তাদের।
    ছাত্রজীবন থেকেই এলাকাবাসীর কাছে অত্যন্ত ভদ্র ও সদালাপী হিসেবে পরিচিত আব্দুর রাজ্জাক মানুষের বিপদ-আপদের খবর শুনলেই ছুটে গিয়ে পাশে দাঁড়াতেন।
    কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতেন। সামাজিক কাজকর্মে অংশ নিতেন।
    আর সে কারণে এলাকার মানুষও তার কর্মের প্রতিদান হিসেবে তাকে নির্বাচিত করেছেন তাদের প্রতিনিধি হিসেবে।
    নির্বাচনে তেমন টাকা-পয়সা খরচ করতে না পারলেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন তিনি।
    তবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও আচার আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনে কোনো পরিবর্তন নেই আব্দুর রাজ্জাকের।
    তিনি সব সময় অতি সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করেন। নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর তার বাবার শরীর বেশি খারাপ হয়ে পড়লে চায়ের দোকানে বসেন কাউন্সিলর নিজেই।
    গত এক বছর ধরে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই গুনটি দোকানে বসে নিজ হাতে যত্ন সহকারে চা তৈরি করে তা ক্রেতাদের মাঝে পরিবেশন করেন।
    এর মধ্যে অনেক ক্রেতাকে বিনামূল্যেও চা পান করিয়ে থাকেন। অপরিচিত অনেক ক্রেতা চা খাওয়ার পর পরিচয় জানতে পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। অনেক ক্রেতা পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্যও করে থাকেন।
    তবে কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন তিনি কাজ করছেন। কোনো খারাপ কিছু করছেন না। কোনো কাজকে অবহেলা করা ঠিক নয়।
    দোকান করার পাশাপাশি এলাকাবাসীর সমস্যার কথা শুনে তা সমাধানও করে থাকেন চা দোকানে বসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায় চা দোকানে।
    কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাকের চা দোকানের ৫০ গজ দূরে মির্জাপুর পৌরসভা কার্যালয়। পৌরসভা কার্যালয়ে এলাকার নাগরিকদের কোনো কাজ থাকলে দোকান ফেলে ছুটে যান অফিসে।
    স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান মাস্টার বলেন, আমাদের দেশে তো জনপ্রতিনিধি মানে বিরাট ব্যাপার স্যাপার।
    কোনো একটি পদ পদবি পেলে তার আগে পেছনে হুমরা-চুমরা থাকে। কিন্ত কাউন্সিলর রাজ্জাক জনপ্রতিনিধি হয়েও যেভাবে একজন সাধারণ চা দোকানির মতো সারাদিন চা বিক্রি করেন তা প্রশংসার দাবি রাখে।
    আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রতিদিন ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার চা-পান বিক্রি হয়ে থাকে।
    তা থেকে যা লাভ হয় তা দিয়ে কোনো মতে চলে যায়। তার মতে টাকা- পয়সায় সুখ আসে না। মানুষের ভালোবাসায় প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়।
    মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র সাহাদৎ হোসেন সুমনও প্রশংসা করলেন এই কাউন্সিলরের। তিনি বলেন, কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক খুবই ভালো একজন মানুষ।
    তাঁর মধ্যে কোনো অহংকার ও প্রতিহিংসা নেই। তিনি তাঁর কথা ও ব্যবহারে সবাইকে অতি সহজে আপন করে নিতে পারেন।

Комментарии • 160