বাইশ রশি জমিদার বাড়ি
HTML-код
- Опубликовано: 26 ноя 2024
- ইতিহাস ঐতিহ্যের শহর ফরিদপুর। সুপ্রাচীন কাল থেকেই ফরিদপুরের রয়েছে অনেক কীর্তিময় গৌরব-গাঁথা। ব্রিটিশ শাসন আমলে সৃষ্ট একটি অন্যতম প্রাচীন জেলার নাম ফরিদপুর। অনেক আউলিয়া-দরবেশ, রাজনীতিক, পূণ্যাত্মার আবাসভূমি হিসেবে এ অঞ্চল অত্যন্ত সুপ্রসিদ্ধ। প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নতত্ত্বের দিক থেকেও ফরিদপুর অগ্রগণ্য। গেরদা মসজিদ (হিঃ ১০১৩), পাতরাইল মসজিদ ( ১৪৯৩ -১৫১৯ খ্রিঃ), সাতৈর মসজিদ ( ১৫১৯ খ্রিঃ), বাসুদেব মন্দির, জগদবন্ধুর আঙ্গিনা, ফতেহাবাদ টাকশাল (১৫১৯-১৫৩২ খ্রিঃ), মথুরাপুর দেউল, বাইশরশি জমিদারবাড়ী, জেলা জজ কোর্ট ভবন (১৮৮৯ খ্রিঃ), ভাঙ্গা মুন্সেফ কোর্ট ভবন (১৮৮৯ খ্রিঃ) ইত্যাদি প্রত্নতত্ত্বের সাক্ষী হয়ে আছে ফরিদপুর জেলা। তন্মধ্যে বাইশরশি জমিদারবাড়ী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।এই জমিদার বাড়িতে ঢোকার আগে চারিদিকের লতাপাতা জঙ্গল, শ্যাওলা ধরা শান বাঁধানো ঘাট, ডোবা, নিস্তব্ধ সুনশান নীরবতা দেখে মনে হতে পারে এ যেন কোন ভূতুড়ে বাড়ি। জনমানবহীন এক সময়ের দাপুটে জমিদারের খাস কামড়ার এমন হাল হকিকত দেখে আপনি কষ্ট পেতে পারেন। কষ্ট পেতে পারেন এই ভেবে যে, সংস্কার আর যত্নের অভাবে এই ঐতিহাসিক ভবনগুলোর উপর দিয়ে যে ধকল গেছে তার চালচিত্রের ইতিহাস জেনে। অথচ, আজ যদি এর সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকতো তবে এই জমিদার বাড়িও হতে পারতো হয়ত পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।প্রতিটা দিন স্থানীয় মানুষের যথেষ্ট আনাগোনা রয়েছে এই বাবুবাড়ি জমিদার বাড়িতে। এই বাড়ির প্রতিটা ইট সুরকী, স্থাপনা, কারুকাজ, রহস্যময়তার স্বাদ স্থানীয়রা টের পেলেও পর্যটকরা রয়ে যাচ্ছেন বঞ্চিতই। বিশেষ করে প্রতিটা ঈদ পার্বণে স্থানীয়দের উপচে পড়া ভীর সেই দাবীটাকেই যেন জোরালোভাবে সমর্থন দেয়। সবার মুখে একটিই দাবী-একে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। ফরিদপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে বর্তমান আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরিফের কাছাকাছি সদরপুর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত বাইশরশি জমিদার বাড়িটি। এককালে প্রভাবশালী বাইশরশি জমিদাররা ফরিদপুর বরিশালসহ ২২টি পরগণা বা জোত মহলের অধিপতি ছিলেন। জমিদারী পরিচালনার পাশাপাশি তখনকার দিনে বাইশরশি বাড়িটি প্রায় ৫০ একর জমি নিয়ে বাগানবাড়ী পুকুর পূজামণ্ডপ দ্বিতল বিশিষ্ট ছোট বড় ১৪টি দালানকোঠায় ঢেলে সাজিয়েছিলেন।যা আজ ভগ্নদশায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানটি সরকার একটু নজর দিলে হতে পারে দেশের মধ্যে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। জানা গেছে ১৭শ শতাব্দীর গড়া পত্তনে এক কালের লবন ব্যবসায়ী শাহ পরিবার বিপুল অরথ সমত্তির মালিক হয়ে কয়েকটি জমিদারী পরগণা কিনে জমিদারী প্রথার গোড়াপত্তন শুরু করে। ১৮শ শতক থেকে ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের আগে পর্যন্ত জমিদার পরিবারটি অনেক ধন-সম্পত্তির মালিক হন ও ২২টি পরগণা ক্রয় করে বিশাল জমিদার হিসেবে ভারতবর্ষে খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হিন্দুস্থান হওয়ার পর ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬২ সাল জমিদারী প্রথা থাকার আগ পর্যন্ত জমিদাররা কলিকাতা বসে জমিদারী দেখাশুনা করত। জমিদারী প্রথা বাতিল হওয়ার পর জমিদার সুকুমার রায় বাহাদুর ছাড়া সবাই কলিকাতা চলে যায়। ৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুকুমার বাবু আত্মহত্যা করেন। এরপর বাড়িটির আর কোন অভিভাবক না থাকায় পরিত্যক্ত বাড়ি হিসেবে গণ্য হয়ে যায়।বর্তমানে প্রায় ৩০ একর জমির উপর জমিদার বাড়িটির অবস্থান হলেও চারপাশের অনেক জমি ভুমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে ৫টি শান বাঁধানো পুকুর, বিশাল বাগানবাড়ী, ও ছোটবড় ১৪টি কারুকার্যখচিত দালানকোঠা জমিদারের কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিনিয়ত চুরি হয়?? যাচ্ছে দরজা জানালা, লোহার কারুকার্যখচিত প্রত্নতত্ত্ব। বাড়িতে বর্তমানে উপজেলা ভূমি রয়েছে।তাই, সময় থাকতেই দেখে আসতে পারেন এই ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি। যে নিদর্শণে বাংলার ইতিহাস কথা বলে, বাংলার সমৃদ্ধি কথা বলে, বাংলার ঐতিহ্য কথা বলে। আর কথা বলে সাধারণ মাটি ও মানুষের। একটি জমিদারী সাম্রাজ্যের গল্পের!ঢাকা থেকে ফরিদপুরে সাধারনত সড়ক পথেই যাতায়াত করা হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে ফরিদপুরে সড়ক পথে যাতায়েত করতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা, তবে ফেরী পারাপারের সময় যানজট থাকলে সময় বেশী লাগে।গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বেশ কয়েকটি বাস ফরিদপুরের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। এ সব বাস গুলোর মধ্যে আনন্দ পরিবহন, আজমিরী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, নাবিল পরিবহন, দ্রুতি পরিবহন, শাপলা পরিবহন ও সোহাগ পরিবহন অন্যতম।লেখকঃ এম, আর, খান সুমন