আমিশ গ্রাম । আমেরিকার এক অদ্ভুত জাতি যারা প্রযুক্তি কে বিশ্বাস করে না॥

Поделиться
HTML-код
  • Опубликовано: 7 сен 2024
  • আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার ল্যানকাস্টার কাউন্টিতে প্রধানত আমিশদের (Amish) বসবাস। এরা বিশেষ এক ধর্মীয় সম্প্রদায় যারা বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করে না। এদের জীবন সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতি নির্ভর, প্রযুক্তি বহির্ভূত জীবনযাপন করে। যতবারই আমিশদের নৈকট্য পেয়েছি, ততবারই অবাক হয়েছি তাদের সহজ-সরল জীবনযাত্রা দেখে। এরা গাড়িতে চড়ে না, বিদ্যুৎ ব্যবহার করে না, টিভি, কম্পিউটার এদের জীবনে খুব একটা প্রয়োজন নেই। এ যেন প্রকৃতির আইন দিয়ে ঘেরা আরেক জগৎ! এই প্রযুক্তির যুগে আমাদের জীবন যখন প্রযুক্তির কাছে জিম্মি, তখন আমিশদের প্রযুক্তিবিহীন এই সাদাসিধে জীবন আমাদের মত শহুরে লোকদের নিত্য ভাবায়, অবাক করে দেয়। আমিশদের জীবন, এদের বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের গোড়ার কিছু গল্প নিয়েই এই লেখাটির সূত্রপাত।
    প্রকৃতিকে তাড়িয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের সবটুকু দখল করে বসে আছে অনেক আগে থেকে। গার্হস্থ্য জীবনের টুকিটাকি থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি বাঁকেই আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর করুণভাবে নির্ভরশীল। আমাদের বোধ, প্রজ্ঞা আর মননে এখন শুধুই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির জয়জয়কার। আমরা বেড়ে উঠছি প্রযুক্তির আলোয়-হাওয়ায়, পরিণত হচ্ছি একেকটি মানুষ নামের রোবটে। বিংশ শতাব্দীতে যখন চারদিকে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির জয়জয়কার তখন এই আমিশরা বেছে নিয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠার এক অসাধারণ অনুকরণীয় দীক্ষা। এরা প্রকৃতির সহজ-সরল জীবন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী, আর বিশ্বাসী বলেই আমিশরা যন্ত্রনির্ভর জীবনকে উপেক্ষা করে প্রকৃতিবাদী হয়ে বেঁচে থাকাটাকেই জীবনের অন্যতম ব্রত বলে ধরে নিয়েছে। তাদের ধারণা, এই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি মানুষকে প্রকৃতি আর ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে।
    পেনসিলভানিয়ার ল্যানকাস্টার কাউন্টিতে এলেই প্রকৃতি তার আপন শোভায় আপনাকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানাবে। এই ছোট শহরের কালো পিচের রাস্তার দুপাশেই দেখতে পাবেন দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা ছবির মত একটা ঝকঝকে ছোট্ট সুন্দর গ্রাম। গ্রামের ছোটা ছোট বাড়ি দূর থেকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা একগুচ্ছ দেশলাইয়ের বাক্সের মতোই দেখায়। রাস্তার আশপাশে যত দূর চোখ যায়, দেখা যায়, ফসলের মাঠে আমিশরা তাদের কাজকর্ম নিয়ে মহাব্যস্ত। কেউ ঘোড়া দিয়ে মাঠে হালচাষ করছে, কেউ ঘোড়ার গাড়িতে ফসল তুলতে ব্যস্ত, কেউ গরু আর ভেড়ার পালের দেখভাল করছে। না, লোক দেখানোর জন্য আমিশরা এ ধরনের জীবন বেছে নেয়নি। আর্থিকভাবে সব রকম সামর্থ্য থাকার পরও এরা প্রকৃতির কাছাকাছি বেঁচে থাকাকেই জীবনের অন্যতম ধর্ম বলে মেনে নিয়েছে। আমিশরা প্রযুক্তি ভালোবাসে না। প্রযুক্তিকে পাশ কাটিয়ে এরা জীবন-যাপনে বিশ্বাসী। গভীরভাবে ধর্মপ্রাণ আমিশরা আমাদের এই তথাকথিত সভ্য নাগরিক জীবনে এসে তাদের বিশ্বাসের গাঁট বাঁধতে চায় না। এরা প্রকৃতিকে ভালোবাসে আর ভালোবাসে নিজেদের ছোট্ট সাজানো-গোছানো ছোট গ্রামটাকে। অর্থ আর ক্ষমতায় এদের কোনো লোভ নেই। কৃষিকাজ করে জীবন-যাপনে এরা বেশি আগ্রহী।
    পুরুষ আমিশরা মাঠে ভুট্টা, তামাক, সয়াবিন, বার্লি আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজির চাষ করে। আর আমিশ মেয়েরা কাপড় বোনে, মধু তৈরি করে, ফুল আর ফলের চাষ করে। আমাদের দেশের মেয়েদের মত আমিশ মেয়েরাও হাত দিয়ে কাপড় কাচে আর তা দঁড়িতে বেঁধে বাড়ির আঙিনায় শুকাতে দেয়। আমিশরা খুবই শান্তিপ্রিয় এক ধর্মীয় সম্প্রদায়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমিশদের তেমন আস্থা নেই। এদের বিশ্বাস, শারীরিক সুস্থতার পূর্ব শর্ত হল মানসিকভাবে সুস্থ থাকার পূর্ণ নিশ্চয়তা।

Комментарии • 14