সূরা আস সাফ এর শ্রুতিমধুর তিলাওয়াত,। আল্লামা হাসান জামিল হাফিঃ।বাংলা বঙ্গানুবাদ
HTML-код
- Опубликовано: 27 ноя 2024
- সুরা আস সাফের প্রাথমিক পরিচিতি ও ব্যাখ্যা।
সুরা সাফ পবিত্র কুরআনের ৬১ নম্বর সুরা। মদিনায় নাজিল হওয়া এ সুরায় রয়েছে ১৪ আয়াত। অন্য সব আসমানি ধর্মের তুলনায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব এবং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ধর্মের সংরক্ষণ ও স্থায়ীত্বসহ আল্লাহর পথে জিহাদ করার গুরুত্ব এই সুরার কয়েকটি প্রধান আলোচ্য বিষয়।
সুরা সাফে মহান আল্লাহর প্রশংসা, কথা ও কাজের মধ্যে মিল রাখার আহ্বান, দৃঢ় অঙ্গীকার ও মনোবল নিয়ে জিহাদ করা আর ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান, অঙ্গীকার ভঙ্গকারী ইহুদিদের তিরস্কার এবং ইসলামের নবীর আবির্ভাবের বিষয়ে হযরত ঈসা (আ.)'র সুসংবাদ সম্পর্কে বক্তব্য রয়েছে। এ ছাড়াও অন্য সব ধর্মের ওপর ইসলাম ধর্মের বিজয়ী হওয়ার গ্যারান্টি দেয়া, আল্লাহর পথে থাকা মুজাহিদদের ইহকালীন ও পরকালীন পুরস্কার এবং হযরত ঈসা নবীর সঙ্গীদের আনুগত্য থেকে শিক্ষা নেয়া সম্পর্কে বক্তব্য দেখা যায় সুরা সাফে।
এই সুরার চার নম্বর আয়াতে সাফ শব্দটি এসেছে। সাফ শব্দের অর্থ সারি।
সুরা সাফ শুরু হয়েছে মহান আল্লাহর প্রশংসার মধ্য দিয়ে। এই সুরার শুরুতে মহান আল্লাহ বলছেন:
আকাশমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে,সবই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত তথা অপরাজেয় প্রজ্ঞাবান।'-
সুরা সাফের দ্বিতীয় আয়াতে একটি জরুরি নৈতিক বিষয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে যে ইমানদাররা যেন এমন কোনো কথা না বলেন যা তারা করেন না। মহান আল্লাহ বলছেন: 'হে ইমানদাররা! তোমরা কেন তা বল যা কর না?'
একদল ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য খুব আগ্রহ দেখাত। কিন্তু যখনই তাদেরকে জিহাদে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হল তখন তারা অসন্তুষ্ট হল এবং তারা নানা ধরনের অজুহাত দেখাতে লাগল। এই আয়াতে তাদের ওই টালবাহানার নিন্দা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ বা মুফাসসিরদের মতে যে কোনো ধরনের চুক্তি বা ওয়াদা লঙ্ঘনের নিন্দাও রয়েছে এই আয়াতে। মহান আল্লাহর এই নিন্দবাদ আরও তীব্র হয়েছে পরের আয়াতে। তিনি বলছেন: তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক বা ঘৃণাব্যঞ্জক।-এ আয়াতের শিক্ষা হল প্রকৃত বিশ্বাসী ব্যক্তির কথা ও কাজ অভিন্ন হওয়া উচিত।
সুরা সাফের চার নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে উৎসাহ দিয়ে বলা হয়েছে:
'আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন,যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে,যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।'
ইসলামের শত্রু মোকাবিলার জিহাদে মুসলমানদের পরিপূর্ণ ঐক্য জরুরি। ইস্পাত-কঠিন ঐক্য ও সুদৃঢ় সংহতি শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মু'মিনদের বিজয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি। শত্রুরা যদি ধ্বংসাত্মক বন্যার মত প্রবল ক্ষরবেগে এগিয়ে আসে তাহলে তা রোখার জন্য দরকার সুদৃঢ় শীশা-ঢালা-প্রাচীর। একটি বিশাল বাঁধের প্রত্যেক অংশ যত বড় বা মজবুতই হোক না কেন তখনই সেসব কার্যকর হবে যখন সেসবের মধ্যে কোনো ফাঁক বা ব্যবধান থাকবে না। পুরো বাঁধ যখন অভিন্ন দেয়ালে পরিণত হবে তখনই তা বন্যা বা আঘাতের মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
সুরা সাফের ৬ নম্বর আয়াতে হযরত ঈসা (আ)'র রেসালাত এবং বনি ইসরাইলের পক্ষ থেকে তাঁকে প্রত্যাখ্যান ও তাঁর প্রতি শত্রুতা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:
'স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আঃ) বললঃ হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর পাঠানো রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসবেন। তাঁর নাম আহমদ। এরপর যখন সে স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আসল, তখন তারা বললঃ এ তো এক প্রকাশ্য যাদু।'
-হযরত ঈসা (আ) মুসা নবীর রেসালাতের সত্যায়ন করেছিলেন এবং মহান আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র আবির্ভাব ঘটবে বলে সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এভাবে হযরত ঈসা নবী/ মুসা নবীর উম্মত ও এ মহান নবীর কিতাব এবং ভবিষ্যতের নবী মুহাম্মাদ (সা)'র উম্মত ও শেষ আসমানী মহাগ্রন্থ কুরআনের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করেছেন।
হযরত ঈসা (আ) ছিলেন একত্ববাদেরই প্রচারক। তিনি নিজেই আল্লাহ ছিলেন বা আল্লাহর পুত্র ছিলেন বলে যে দাবি করা হয় তা পুরোপুরি বানোয়াট। ইসলাম যে অন্য ধর্মগুলোর চেয়ে উন্নত ও পরিপূর্ণ ধর্ম তা বোঝা যায় এ আয়াতে উল্লেখিত ইসলামের নবীর আগমনের সুসংবাদ ঘোষণা থেকে। সাধারণত নতুন সে ঘোষণাকেই সুসংবাদ বলা হয় যে সংবাদে অতীতের চেয়ে উন্নত কিছু দেয়ার খবর থাকে।
ইসলামী বিশ্বাস এবং এর নৈতিক ও সামাজিক বিধি-বিধানসহ সব ধরনের বিধি-বিধান তাওরাত ও ইনজিলের বিধি-বিধানের চেয়ে অনেক উন্নত বলে বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করছেন। বর্তমান যুগে কথিত ইহুদিদের তাওরাত ও কথিত খ্রিস্টানদের ইঞ্জিল বা বাইবেল নামে যে বই দেখা যায় তা দুই মহান নবী হযরত মুসা এবং হযরত ঈসার ওপর নাজিল হওয়া আসল তাওরাত ও ইঞ্জিল নয়। বরং বর্তমানের তাওরাত ও বাইবেল এ দুই মহান নবীর সমসাময়িক কোনো কোনো ব্যক্তির বা তাদের বহু পরের কোনো কোনো ব্যক্তির লেখা বই।
সেই আদি তাওরাত ও ইঞ্জিলের বক্তব্য বা শিক্ষা পরবর্তী ও বর্তমান যুগের তাওরাত ও ইঞ্জিলে খুব কমই দেখা যায়। নানা ব্যক্তির বিকৃত ও ভুল চিন্তাধারা ঢুকে পড়ায় বিকৃত হয়ে গেছে এ দুই ধর্মীয় মহাগ্রন্থ। এতসব বিকৃতি সত্ত্বেও এ দুই ধর্মীয় গ্রন্থে এখনও এমন কিছু বক্তব্য দেখা যায় যেখানে একজন মহামানবের আবির্ভাবের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। যেমন, ইউহান্নার বাইবেলের ১৪ তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে:
আমি পিতার (প্রভুর) কাছে চাইব এবং তিনি তোমাদেরকে দেবেন আরও এক ব্যক্তি যিনি হবেন অন্যদের সান্ত্বনা দানকারী। আর তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকবেন।'
যদিও বনি ইসরাইলের একদল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র প্রতি ঈমান এনেছিল, কিন্তু তাদের অনেকেই মহানবীর সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হয়। তারা এমনকি মহানবীর প্রকাশ্য মু'জিজা বা অলৌকিক নিদর্শনগুলোকেও অস্বীকার করে।এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুরা সাফে বলেছেন:
'যারা ইসলামের দাওয়াত পেয়েও আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে; তাদের চেয়ে বড় যালেম আর কারা হতে পারে? আল্লাহ জালিমদেরকে পথ দেখান না।'
আসলে যারা দিবালোকের মত স্পষ্ট সত্যকে অস্বীকার করে তারা সবচেয়ে বড় অত্যাচারী। এইসব জালিমের কারণে অন্য অনেক সাধারণ মানুষ সঠিক ও মুক্তির পথ খুঁজে পায় না।