নুসরাত ফাতেহ আলী খানের বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে ওঠার কাহিনী || ইতিহাসের সাক্ষী

Поделиться
HTML-код
  • Опубликовано: 9 сен 2024
  • ইতিহাসের সাক্ষীঃ
    শিরোনামঃ পাকিস্তানের কাওয়ালী গায়ক নুসরাত ফতেহ আলি খানের বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে ওঠার কাহিনী।
    বিস্তারিত তথ্যঃ উনিশশ' সত্তরের দশকের শেষ দিকে অনেকটা হঠাৎ করেই আবির্ভাব ঘটেছিল পাকিস্তানের কাওয়ালী গায়ক নুসরাত ফতেহ আলি খানের যিনি পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই পরিণত হয়েছিলেন বিশ্বসঙ্গীত জগতেরই এক তারকায়। কাওয়ালীর একজন ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে নুসরাত ফতেহ আলি খানের সম্ভাবনা প্রথম অনুভব করেছিলেন ইংল্যান্ডের বার্মিহাম শহরের এক রেকর্ড ব্যবসায়ী। তার নাম মোহাম্মদ আইউব। বামিংহাম শহরে তার একটি দোকান ছিল যেখান থেকে তিনি এশিয়ান মিউজিকের রেকর্ড বের করতেন।
    ১৯৭৭ সালে একদিন সকালে তার হাতে পৌঁছালো কতগুলো টেপ যাতে পাকিস্তানের কিছু নবীন গায়কের গান ছিল। তিনি যখন সেগুলো শুনতে বসলেন, বিশেষ করে একটি কণ্ঠ তাকে চমকে দিল। "আমার মনে হলো, এ কি, এ যে এক দেবদূতের কণ্ঠ। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম। এমনি উঁচু পর্দার, মিষ্টি আর নেশা-ধরানো আওয়াজ তার। আমরা শুনেই যাচ্ছি, শুনেই যাচ্ছি আর সেই কণ্ঠস্বর যেন আমাদের আরো বেশি করে পেয়ে বসছে।" "আমার জন্য এ ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমরা উপলব্ধি করলাম আমরা এক বিশ্বমানের কণ্ঠ আবিষ্কার করেছি, আর একে আমাদের সারা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরতে হবে। " এই কণ্ঠ ছিল নুসরাত ফতেহ আলি খানের । মোহাম্মদ আইউব কালবিলম্ব না করে নুসরাত ফতেহ আলি খানের সাথে চুক্তি করে ফেললেন, তার চারটি অ্যালবাম বের করার জন্য।
    নুসরাত ফতেহ আলি খানের জন্ম পাকিস্তানের শিল্প শহর ফয়সলাবাদে। তার পূর্ব পুরুষরা কয়েক প্রজন্ম ধরে কাওয়লি গায়ক। এই কাওয়ালি হচ্ছে এক ধরণের ভক্তিমূলক সুফি সংগীত যার উৎপত্তি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে। মোহাম্মদ আইউবের সাথে নুসরাত ফতেহ আলি খানের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয় ১৯৮০ সালে, ইংল্যান্ডেই। "আমরা নুসরাত ফতেহ আলি খানকে আমন্ত্রণ জানানো হলো প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডে কিছু অনুষ্ঠান করার জন্য। এর মধ্যে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বামিংহামে। "বার্মিংহ্যামের অনুষ্ঠানে মোটেও বেশি লোক হয়নি। হাজারখানেক দর্শক বসতে পারে এমন মিলনায়তনে লোক হয়েছিল মাত্র ৫০ বা ৬০ জনের মতো। কারণ ওই অনুষ্ঠানের প্রচারের দায়িত্বে যারা ছিল তারা ঠিক জানতো না যে কিভাবে একজন নতুন শিল্পীকে তুলে ধরতে হবে। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানটি শুনে আমার মনে হলো এতে আরো অনেক বেশি লোক হওয়া উচিত ছিল।"
    মোহম্মদ আইউব ঠিক করলেন, তারা নিজেরাই পরের সপ্তাহে নুসরাত ফতেহ আলি খানের আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন। তাই হলো। আর এই অনুষ্ঠানটির জন্য তারা খুব জোরেশোরে প্রচারাভিযান চালালেন যাতে অনেক লোক সমাগম হয়। "এই দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটির সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেল। মিলনায়তন এমনভাবে ভরে গেল যে সবাই বসার সুযোগ পাননি অনেকেই করিডোরে দাঁড়িয়ে গান শুনতে হয়েছিল। এর পর নুসরাত ফতেহ আলি খানকে আমরা ইংল্যান্ডের অন্যন্য শহরগুলোতে নিয়ে গেলাম যেখানে এশিয়ানরা বড় সংখ্যায় বাস করেন। সেই অনুষ্ঠানগুলোও খুব ভালোভাবে উৎরে গেল"
    কিন্তু তখন পর্যন্ত নুসরাত ফতে আলি খানের গান শুনেছিলেন কেবল এশিয়ান শ্রোতারাই। কিন্তু সেই চিত্রটা একেবারেই পাল্টে গেলে ১৯৮৫ সালে। সে বছর গ্রীষ্মকালে এসেক্সে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ব্রিটিশ বিশ্বসংগীত উৎসব বা ওম্যাড। সেই উৎসবেই এক রাতে নুসরাত ফতেহ আলি খান আর তার দল যাকে বলা হতো পার্টি মঞ্চে উপস্থিত হলেন। বলা হয়, সেদিনের সেই অনুষ্ঠান নুসরাত ফতেহ আলি খানের সঙ্গীতজীবনের গতিধারাই বদলে দিয়েছিল। বলছিলেন রিয়েল ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ম্যানেজার এ্যামান্ডা জোনস। এই রেকর্ড লেবেলটি চালু করেছিলেন ইংরেজ গায়ক পিটার গ্যাব্রিয়েল যিনি বিশ্বসংগীত উৎসবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। "আমি মনে করি নুসরাত ফতেহ আলি খানকে নিয়ে পরবর্তীকালে সারা বিশ্বে যে মাতামাতি তৈরি হয়, আমার মতে তার সূচনা এসেক্সের মার্সি আইল্যান্ডের সেই ওম্যাড ফেস্টিভ্যাল থেকেই। তাতে তিনি কাওয়ালি পরিবেশন করেছিলেন প্রধানত শ্বেতাঙ্গ শ্রোতাদের সামনে যারা এর আগে হয়তো কখনোই এ ধরণের গান শোনেন নি।" সেই রাতটির কথা মনে আছে মোহাম্মদ আইউবেরও। "সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চটি ছিল সমুদ্রের পারে। ঠান্ডা হাওয়া বইছিল। নুসরাত ফতেহ আলির পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। তিনি বললেন, এ অবস্থায় তিনি মঞ্চে বসে গান গাইতে পারবেন না। তখন তার জন্যে কিছু কম্বল, বালিশ, এসব নিয়ে আসা হলো। সেগুলো তার পায়ে জড়িয়ে দেয়া হলো। তার চার পাশে দেয়া হলো কয়েকটি হিটার। তার পর তিনি গাইতে শুরু করলেন। আর সে যে কি গান তিনি গাইলেন, আমি তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারবো না।" "লোকেরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার কেউ যেন নড়তে পারছিলেন না । নুসরাতের গাইবার কথা ছিল দেড় ঘন্টা। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করবেন না, যখন তিনি গান শেষ করলেন তখন বাজে ভোর পাঁচটা। তখন দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে।" "তার কণ্ঠের সৌন্দর্য ছিল বিস্ময়কর। একদিকে তা ছিল যেমন আবেগময় আর নরম, অন্যদিকে তেমনি অবিশ্বাস্য রকমের জোরালো আর উচ্ছল।" কিছুদিনের মধ্যেই সারা পৃথিবী জুড়ে নুসরাত ফতেহ আলি খানের অনুষ্ঠান হতে লাগলো।
    কিন্তু নুসরাতের জীবনযাত্রার প্রভাব তার শরীরের ওপর পড়তে শুরু করেছিল। তার ওজন খুব বেশি বেড়ে যায় এবং স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা দেখা দেয়। ১৯৯৭ সালে মাত্র ৪৮ বছর বয়েসে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর শুধু যে পাকিস্তানেই মানুষ শোকাহত হয়েছিলেন তা নয়, পৃথিবীর নানা দেশের মানুষ তার বিদায়ের শূন্যতাকে অনুভব করেছিলেন। নুসরাত ফতেহ আলির গান আজও সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।
    এটা দেখে অবাক লাগতো যে তিনি ছিলেন খুবই শান্ত এবং গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। তার মধ্যে সবসময়ই একটা স্থির এবং নিজের মধ্যে মগ্ন হয়ে থাকার ভাব দেখতে পেতাম। "আমার মনে হয়, গান গাওয়াটাই ছিল তা জীবনের সবকিছু। এবং এর মধ্যে দিয়েই তার ভেতরের শক্তি এবং অভিব্যক্তির বহিপ্রকাশ ঘটতো যা তার সামনে থাকা শ্রোতাদের সম্মোহিত করে ফেলতে পারতো।"
    অডিও সৌজন্যেঃ বিবিসি বাংলা।

Комментарии • 32