Видео

দ্বিতীয় স্তবক "বসিয়া নিরালা ঘরে, কার্য করে ধীরে ধীরে বিচিত্র কৌশল করে মানুষ বানায় । ছিয়া, ছফেদ, লাল, জর্দা চাইর রঙ্গে করিয়া কাঁদা বানাইয়া নর মাদা ভবেতে পাঠায় ॥" এই স্তবকে কবি মানবদেহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া বোঝাতে চেয়েছেন। কাদামাটি অর্থাৎ পৃথিবীর উপাদান দিয়ে, সৃষ্টিকর্তা অত্যন্ত যত্নে মানুষের শরীর তৈরি করেছেন। "ছিয়া, ছফেদ, লাল, জর্দা" চার রঙ ব্যবহৃত হয়েছে-এই রংগুলো সম্ভবত বিভিন্ন উপাদান বা রসের প্রতীক, যা মানুষের শরীরে বিদ্যমান। এই উপাদানগুলোর মিশ্রণে মানবদেহ সৃষ্টি হয় এবং সৃষ্টিকর্তা তাকে পৃথিবীতে পাঠান। তৃতীয় স্তবক "মানুষের ভিতর মানুষ, আত্মা দিয়া করছে হুঁশ কেউরে রাখিয়া সন্তোষ, কেউরে কাঁদায়। প্রথম গড়ে নাভী কুণ্ড অধঃ পদে ঊর্ধ্বে মুণ্ড তিনশ দশ দিন দশ দণ্ড রাইখা একজাগায় ॥" মানবদেহে কেবল শারীরিক গঠন নয়, এর ভিতরে এক বিশেষ আত্মিক শক্তি বা চেতনা রয়েছে, যা তাকে জীবন ও বিচারবোধ দেয়। "প্রথম গড়ে নাভী কুণ্ড" অর্থাৎ গর্ভে শিশুর সৃষ্টিকাল, এবং এর জন্য ৩১০ দিন সময় লাগে, যা আসলে গর্ভাবস্থার সময়কালকে নির্দেশ করে। নাভি থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের কাঠামো সৃষ্টি করতে এই সময় লাগে। এটি মানব শরীরের আধ্যাত্মিক ও শারীরিক প্রকৃতিকে বুঝতে সাহায্য করে।

চতুর্থ স্তবক "নাভী হইতে উর্ধে সিনা, দেখতে তারে কি নমুনা দুই দিগেতে দিছে টানা প্রেমের আর্চালায় যেমন একটা রাজবাড়ি, থরে থরে কর্মচারী তুলনা রাবণের পুরি করা নাহি যায় ॥" মানবদেহকে এখানে একটি "রাজবাড়ি" হিসেবে উপমা দেওয়া হয়েছে, যেখানে নানা রকম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা শক্তি কাজ করছে, যেন রাজবাড়ির কর্মচারীদের মতো। এই স্তবকে হৃদয়ের সাথে প্রেমের সংযোগ দেওয়া হয়েছে, যা আসলে আত্মিক প্রেম বা আধ্যাত্মিক চিন্তার ইঙ্গিত বহন করে। এটি রাবণের মতো বিশাল এবং জটিলতা বহন করে। পঞ্চম স্তবক "নাভির চারি আঙ্গুল নিচে, তিনটি কটরা আছে তিনটি জিনিস ভরা আছে, তিনটি কটরায়। উপরে হাওয়া নিচে পানি, মাঝখানে আগুনের খনি ক্ষমা নাই দিবসরজনী তিনজনায় চালায় ॥" এই স্তবকে মানবদেহের তিনটি মৌলিক উপাদান বা শক্তির কথা বলা হয়েছে-বায়ু, পানি, এবং আগুন। এই উপাদানগুলো দেহের বিভিন্ন অংশে সক্রিয় থাকে এবং সারাক্ষণ দেহের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। বায়ু আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে, পানি আমাদের দেহের স্নিগ্ধতা বজায় রাখে, এবং আগুন আমাদের দেহে শক্তি উৎপন্ন করে। ষষ্ঠ স্তবক "কলিজা রয়েছে ডাইনে, বায়ে ফুসফুস সবাই জানে দিল রয়েছে মধ্যখানে মানুষের দেহায় ॥ কলিজাতে শাহা আলী, ফুসফুসে রাগের থলি দিলের ভিতর আক্কেল আলী গোদা নিরালায় ॥" এখানে কবি বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে নির্দিষ্ট নামে অভিহিত করেছেন। "কলিজাতে শাহা আলী" বলতে সাহস বা মনোবলের শক্তি বুঝিয়েছেন, যা কলিজার সাথে যুক্ত। "ফুসফুসে রাগের থলি" বলতে ক্রোধের শক্তি বোঝানো হয়েছে। "দিলের ভিতর আক্কেল আলী" বলতে বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার অবস্থান বোঝানো হয়েছে।

সপ্তম স্তবক "গোর্দার ভিতর পাঁচটি কোঠা সুন্দর সুন্দর নকশাকাটা পাঁচজনা অতিথি বেটা থাকে সেই জায়গায় । পাঁচ পাঁচা পঁচিশের গুণে, কাম চালাইতেছে রাত্রদিনে। তাঁরা পাঁচজন বইসা থাকে ঘরের কোনায় ॥" পাঁচটি কোঠা বা কক্ষ মানবদেহের পাঁচটি ইন্দ্রিয়কে নির্দেশ করে। ইন্দ্রিয়গুলি আমাদের চেতনাবোধের ভিত্তি, যা প্রতিটি কাজের জন্য দায়ী। কবি এখানে চেতনাসম্পন্ন পাঁচটি ইন্দ্রিয়কে কল্পিতভাবে ব্যক্তিরূপে উপস্থাপন করেছেন, যারা সারাক্ষণ আমাদের প্রতিটি কাজে অবদান রাখছে। অষ্টম স্তবক "চার আত্মা একসঙ্গে মিশে, তাস খেলায় স্কুলের দেশে একজন আছে কাছে বসে, হিসাব করায় দায়। ডাকিতেছে দমের ভিনতি, একশ হাজার ছয়শ গুনতি কাবার করে কড়া ক্রান্তি চব্বিশ ঘণ্টায় ॥" এখানে বলা হচ্ছে, মানুষের চারটি আত্মিক শক্তি প্রতিনিয়ত কাজ করছে এবং একজন-যাকে বিবেক বা চেতনা বলা যেতে পারে-প্রতিটি কাজের হিসাব রাখছে। এই আত্মাগুলো আমাদের শ্বাসের সাথে মিলে আমাদের জীবনকে সচল রাখে এবং প্রতিনিয়ত আমাদের দিনকে পূর্ণ করে তোলে। "একশ হাজার ছয়শ গুনতি" হয়তো শ্বাসপ্রশ্বাসের সংখ্যা বা হৃদপিণ্ডের স্পন্দনকেও বোঝায়। শেষ স্তবক "কইতে গেলে এসব কাণ্ড, ফেটে যাবে হৃদপিণ্ড ছেড়ে দিবে দেহভাণ্ড জোড়ায় জোড়ায় । ভেবে রশিদ উদ্দিন কয়, ভাঙ্গেতে ব্রক্ষ্মাণ্ডে রয় তালাশেতে পরিচয় করলেন সাধু রায় ॥" গানের শেষাংশে কবি বলছেন, এই আধ্যাত্মিক ও জটিল সত্যের গভীরে প্রবেশ করা অত্যন্ত কঠিন। সমস্ত রহস্যের ব্যাখ্যা দিতে গেলে আমাদের হৃদপিণ্ড ফেটে যাবে, কারণ এই সত্য অত্যন্ত গভীর এবং মনকে আন্দোলিত করে। তাই সাধু বা গুণীজনেরা আত্মিক সাধনার মাধ্যমে এই গভীর সত্যের সন্ধান করেন এবং সেই প্রকৃত পরিচয়ের পথে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন।

Thanks.

ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ।

একটু শুনে লিখে নিতে হবে, ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ। একটু চিন্তা করেন।

ধন্যবাদ, আপনাকে।

Thanks

আপনা‌কেও ধন্যবাদ।

Thanks

ধন্যবাদ।